চাটগাঁর সংবাদ ডেস্কঃ একটানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দিনে ও রাতে আসা জোয়ারের কারণে থই থই পানিতে ভাসছে চট্টগ্রাম।
টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুল্কবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুর এবং হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক এবং অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে গেছে এলাকাগুলো। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জমে থাকা পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে জোয়ারের পানি। জোয়ারের ফলে আগ্রাবাদ, বন্দর এবং ইপিজেডের বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে।
ভুক্তভোগীরা বরছেন, ‘নালা-নর্দমায় পলিথিন ও আর্বজনা জমে থাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় জমে আছে পানি। বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। অনেক বাসায় জ্বলছে না চুলা।’
জলাবদ্ধতা এবং মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষকে (সিডিএ) দোষারোপ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় না করার অভিযোগ তুলেছেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাইল করিম চৌধুরী।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের মূলধারার একটি গণমাধ্যমকে তিনি জানান, সিডিএ’র চলমান মেগা প্রকল্পের সাথে চসিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ প্রকল্পে কিছু করার মত ক্ষমতাও নেই মেয়রের।
তিনি বলেন, ‘শুধু খালের দুই পাড়ে ওয়াল দিলে হবে না। খাল থেকে মাটি তুলতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলে বিশেষ করে চান্দগাঁও ও বাকলিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে, এখানে ভরাট হয়ে থাকায় খাল দিয়ে পানি ঠিকভাবে যেতে পারছে না। এখানে চাক্তাই খাল ও বীর্জা খালসহ অন্যান্য খালগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তারা একেকটা খাল কতটা গভীর করেছে তা জনগণের জানার অধিকার আছে। প্রকল্পের ডিপিপি’তে ২০ কোটি কিউবেক মাটি উত্তোলনের কথা লেখা আছে। সে পরিমাণ মাটি তুলেছে? মাটি উত্তোলন করা না হলে প্রকল্পের সাফল্য আসবে না।’
মেয়র বলেন, ‘কিছুদিন আগে যে সমন্বয় সভা হয়েছিল সেখানে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ’র সমন্বয়ে যৌথ একটি টিম গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছি। এই টিম পর্যবেক্ষণ করে দেখবে কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। খাল কত মিটার গভীর করা হবে, কত ঘনফুট মাটি উত্তোলন করা হবে সে সব পর্যবেক্ষণ করবে কমিটি।’
সিডিএ সমন্বয় করছে না অভিযোগ করে মেয়র বলেন, যে ওয়ার্ডে কাজ (মেগা প্রকল্পের) করবে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে বলেছি। তারা (সিডিএ) তো কর্পোরেশনকে কোনো কিছু জানায়ওনি। তারা তাদের ইচ্ছেমত কাজ করছে। এত বড় প্রকল্প, চট্টগ্রামবাসীর বাঁচা–মরার প্রশ্ন, এরপরও তারা সমন্বয় করছে না।’
মেয়র বলেন, বাকলিয়া–চান্দগাঁওসহ আমাদের এই অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ গরিব। তারা ছোট্ট সেমিপাকা ঘরে বাস করে। পানির জন্য তারা খেতেও পারছে না, থাকতেও পারছে না। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ। এ প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশনের কোনো হাত নেই। কিন্তু মানুষ সিটি কর্পোরেশনকে গালাগালি করছে। আমি বলেছি, কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো কাউন্সিলরকে ডেকেছে? সিডিএ ওনাদের মত কাজ করছে।
তথ্যসূত্র: সংগৃহীত
Leave a Reply